নামাজে অমনযোগী হলে করণীয়
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো নামাজ।
নামাজ বান্দাকে আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে সাহায্য করে। নামাজের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা আসে। নামাজ বান্দাকে সুন্দর পথ দেখায়। সুস্থ থাকতে বান্দাকে সাহায্য করে।এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ). বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং একাগ্রতার সাথে সুন্দরভাবে রুকূ-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ পূর্বের সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোন কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য।’ (মুসলিম হা/২২৮; মিশকাত হা/২৮৬)
রাসূললুল্লাহ (সাঃ) এর নিম্নোক্ত হাদিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজ কে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি। বান্দা আমার কাছে যা কামনা করবে তাই পাবে। যখন আমার বান্দা বলে, (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের মালিক)। তখন আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার প্রশংসা করল)। যখন বলে, (পরম করুণাময় অসীম দয়াবান) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার গুণগান করল)। যখন বলে, (বিচার দিবসের মালিক) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার যথাযথ মর্যাদা দান করল)। যখন বলে, (আমরা কেবলমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি)। আল্লাহ বলেন, (এটি আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দা যা চাইবে, তাই পাবে)। যখন বলে, (আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন। তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে)। আল্লাহ তাআলা বলেন, (এটা আমার বান্দার জন্য, আর আমার বান্দা যা প্রার্থনা করবে তাই পাবে)। (মুসলিম হা/৩৯৫; মিশকাত হা/৮২৩)
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ (বাকারাহ ২/২৩৮) কাজেই ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করুন। আবু কাতাদা (রা.)হতে বর্ণিত, রাসূললুল্লাহ (সাঃ)বলেন, ‘নিকৃষ্টতম চোর হল সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কিভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, ‘যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না’। (আহমাদ ; মিশকাত হা/৮৮৫ )
হাদীসে বলা হয়েছে, "বান্দা যখন সিজদায় যায় তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় হয়।" কুরআনে প্রায় ৮২ বার আল্লাহ নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন। হাদীসে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অনেক তাগিদ দিয়েছেন নামাজ আদায়ের ব্যাপারে। নামাজ হলো এমন এক ইবাদত যা মুসলিম ও অমুসলিম এর মাঝে পার্থক্য করে দেয়। নামাজ মানুষকে সব প্রকার পাপ কর্ম থেকে দূরে রাখে।
কিন্তু নামাজ আদায় করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেরই মনোযোগ থাকে না। কেন নামাজে মন থাকে না তার বাস্তবসম্মত কিছু কারণ তুলে ধরা হলোঃ
১. সালাতকে নিছক ধর্মীয় অনুষ্ঠান মনে করা : কেবলমাত্র কিছু মুখস্ত সুরা, দোয়া, মন্ত্রের মত পাঠ করা। তারপর রুকু করা, সিজদাহ করা- এভাবে নামাজ শেষ করা। পুরো বিষয়টি কেমন যেন একটা যান্ত্রিকতা ও অনুষ্ঠানিকতা। সালাতের সাথে অন্তরের একটা যে যোগসাজশ আছে তা অনেকেরই উপলব্ধি হয় না।আল্লাহতায়ালা বলেন-‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর’ (সূরা বাক্বারা-৪৫)
২. সালাতকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা : দৈনন্দিন আর পাঁচটা কাজের মত মনে করা। অথচ দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবির একমাত্র উপায় হচ্ছে নামাজ।রাসূললুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বললেন, ‘যখন তুমি নামাজে দন্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় কর, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ’। (ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫২২৬, সনদ হাসান)
৩. পাপ কাজে ডুবে থাকা : নিয়মিত সালাত আদায় করা সত্ত্বেও অনেক মুসল্লি আছেন যারা প্রকাশ্য ও নিয়মিত পাপে ডুবে থাকেন। মানুষ স্বভাবত যেসব করে তা তার সব সময় মনে থাকে। নামাজে সিনেমার কোনো অংশ মনে আশাটা অসম্ভব নয়। অনেকে আবার নাটক, সিনেমার মাঝে বিরতি বা অ্যাড দেয়ার সময় খুব তাড়াতাড়ি করে নামাজ সেরে ফেলেন।
৪. অর্থ না বোঝা : সালাত যেহেতু পুরোটাই আরবি ভাষায় তাই এর অর্থ আমরা সহজেই বুঝি না। অর্থ না বোঝার ফলে আমাদের মুখস্ত সুরাগুলো মুখে বলতে থাকি কিন্তু অলস অন্তর অন্য চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। আর যদি বোঝা যেত তাহলে অন্তর সেটা নিয়ে ভাবতো।
৫. আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার বেশি মূল্যায়ন করা : নামাজের ওয়াক্তে নামাজকে ভুলে অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকা। বিশেষ করে উপার্জনের ব্যাপারে ইসলামের তোয়াক্কা না করা।
৬. সালাতের হুকুম আহকাম ঠিকভাবে অনুসরণ না করা : রাসুলে কারীম (সা.) যেভাবে নামাজের নিয়ম দেখিয়েছেন তা সঠিকভাবে না মানা।
৭. শয়তানের ধোঁকা : যেহেতু সালাত সবচেয়ে বড় ইবাদত তাই এতে শয়তানের ধোঁকাও বেশি। শয়তান তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বান্দার সালাত নষ্টের কাজে নেমে পড়ে। সালাতে এদিক ওদিক তাকানো এটাও শয়তানের প্রভাবের ফল।
৮. নিয়মিত কোরআন-হাদীস পাঠ না করা : কোরআন-হাদিস নিয়মিত পাঠ না করলে শয়তান বান্দাকে অন্যদিকে ধাবিত করে।
নামাজে মনোযোগী হবার কার্যকরী ৭টি উপায়-
১) অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে সবকিছু করা। অন্তত সালাতে যে সূরাগুলো পড়া হয় এবং রুকু,সিজদাহ ও বসা অবস্থায় তাসবীহ ও দুয়াগুলোর অর্থ শব্দের প্রতি খেয়াল রেখে পড়া।
২) তাকবীরে তাহরিমা তথা আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধার আগে চিন্তা করা আমি কার সামনে দাঁড়াচ্ছি। যার সামনে দাঁড়াচ্ছি তিনি কতো বড়, কতো মহান। দুনিয়ার একজন সামান্য প্রেসিডেন্টের সামনে যদি আমি দাঁড়াই তবে যেরকম মনোযোগ সহকারে স্থির হয়ে দাঁড়াতাম, তাহলে সমগ্র সৃষ্টিজগতের মালিকের সামনে দাঁড়ালে আমার আচরণ কেমন হওয়া দরকার?
৩) তাজওয়ীদ সহকারে ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করা ও রুকু সিজদাহর তাসবীহ ভক্তিসহকারে আদায় করা।
৪) হাদিসে এসেছে, বান্দা যখন সিজদাহ অবস্থায় থাকে তখন সে মহান আল্লাহর খুব নিকটবর্তী হয়ে যায়। তাই সিজদাহ অবস্থায় আমাদের মনে এই ধ্যান আসা উচিত যে আমার দেহের সবচেয়ে সম্মানের অঙ্গ মাথাকে আমার মালিকের সামনে লুটিয়ে দিলাম শুধুমাত্র তারই অনুগ্রহ পাওয়ার আশায়।
৫) এই ধ্যান করা যে আমার মনের অবস্থা একমাত্র আল্লাহই জানেন। রিয়া তথা লোকদেখানোর চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই ঝেড়ে ফেলা, শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই সালাতকে সুন্দর করার চেষ্টা করা। আর কাল হাশরের ময়দানে এই সালাতের প্রতিদানের আশা করা, সাথে সাথে নিজের গুনাহ ও দুর্বলতার কারণে সালাত অগ্রাহ্য হওয়ার আশঙ্কাও রাখা।
৬) নড়াচড়া করা, গা চুলকানো, মশা তাড়ানো, টুপি ঠিক করা, জামা টেনে টুনে ঠিক করা ইত্যাদি অযথা কাজ পরিহার করার চেষ্টা করা।
৭) মনে মনে চিন্তা করা যে আমি পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে আছি, আমার ডানে জান্নাত, বামে জাহান্নাম, মাথার উপর গুনাহের বোঝা, পেছনে মালাকুল মাউত জান কবজের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। মনে করা যে এটিই আমার জীবনের শেষ সালাত, এরপর হয়তো আমার আর সালাত আদায়ের সুযোগ হবে না।
মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক ও আন্তরিকতার সাথে সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন!
#Collected_From_Different_Posts
#R_A
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন