নবিজী কে ভালোবাসার জন্য
নবিজী কে ভালোবাসার জন্য আমাদের ভালো মুসলমান হওয়ার প্রয়োজন নাই।
পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মুসলমানও নবিজী কে নিঃশর্ত ভালোবাসতে পারে। এই ভালোবাসা বা আবেগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নাই।
আমরা আমাদের বাবা মায়ের অনেক কথাই শুনি না। তার মানে এই না যে আমি আমার মা বাবাকে ভালোবাসতে পারবো না।
এখন, কেউ যদি আমার মা-বাবা কে নিয়ে খারাপ কথা বলে, ছেলে হিসেবে আমার ট্রিগার্ড হওয়া স্বাভাবিক। সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখানো স্বাভাবিক। সেই প্রতিক্রিয়া দেখে আপনি কোনভাবেই বলতে পারবেন না, তুই তো ভালো ছেলে না। মা-বাবার কথা শুনিস না। তোর মা বাবাকে আমি গালি দিলেই বা তোর কী?
মা-বাবা কে ভালোবাসার জন্য যেমন ভালো সন্তান হওয়া জরুরি না, পৃথিবীর সবচে খারাপ ছেলেটাও যেমন মা বাবাকে ভালোবাসতে পারে, প্রোটেক্ট করতে পারে, তেমন, নবিজীকে ভালোবাসতে হলেও গুড মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নাই।
ভালোবাসার মানুষের ব্যাপারে পজেসিভনেস হিউম্যান ন্যাচারের অংশ। নবিজী যেহেতু আমাদের কাছে আবেগের সর্বোচ্চ একটা জায়গা, কাজেই নবিজীকে নিয়ে টু শব্দ করলেও আমাদের গায়ে লাগবে, এটা স্বাভাবিক। আমরা আমাদের মা বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী সন্তানদের ব্যাপারে যতটা প্রটেক্টিভ, নবিজীর ব্যাপারে আমরা তার চেয়েও বেশি প্রটেক্টিভ। এখন এইটা কার ভালো লাগলো, কার লাগলো না, আমাদের দেখার সময় নাই।
বিবিসি যখন বলে, ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স), ঐটা কিন্তু নবিজীর পরিচয় দিতে পারে না। নবিজীর সাথে আমাদের সম্পর্কটা শুধু নবী-পয়গম্বরের সম্পর্ক না, নবিজীর সাথে আমাদের সম্পর্ক হলো, আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।
আমরা যে নামাজ পড়ি, আমরা যে রোজা রাখি, আমরা যে বিয়ে করি, জন্মের পর আমাদের কানে আজান দেওয়া হয়, মৃত্যুর পর আমাদের জানাজা পড়া হয়, সবকিছুই আমরা পেয়েছি আমাদের প্রফেটের কাছে থেকে। আমাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা, আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু, আমাদের সুখ থেকে দুঃখ, আমাদের লাইফের প্রতিটা মোমেন্টে আমাদের প্রফেট জড়িয়ে আছেন। কাজেই, আমাদের নবিজীকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলবে, আর আমরা চুপ করে থাকবো, এটা ভাবার দুঃসাহস কেমনে হয়?
আব্রাহামিক রিলিজিয়নের বহু নবীরই অলৌকিক ক্ষমতা ছিলো। যেমন যিশু হাতের ছোঁয়ায় কুষ্ঠরোগীকে ভালো করতে পারতেন। আমাদের নবিজীর ক্ষেত্রে অন্যতম একটা অলৌকিকত্ব ছিলো তার চরিত্র। এমনকি সেই সময়ে মক্কার পৌত্তলিকরা নবিজীকে জাদুকর বলেছে, কবি বলেছে, কিন্তু একজনও, আই রিপিট- একজনও নবিজীর চরিত্র নিয়ে কোন কথা বলে নি। তাঁর অসাধারণ চরিত্রের কথা ইসলাম আসার আগে বা পরে, তাঁর শত্রুরাই স্বীকার করে গেছেন।
যে মানুষটাকে প্রকাশ্যে প্রস্তাব দেওয়া হলো, আমরা তোমাকে প্রচুর ধন- সম্পদ দেবো, স্বর্ণ দেবো, আরবের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের তুমি নিয়ে নাও, যাকে পছন্দ হয় তাকেই নাও, তবুও আমাদের ধর্মের বিরোধিতা করো না। এমন প্রস্তাবে মানুষটা বললেন, আমার এক হাতে চাঁদ, আরেক হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি আমার কথা বলা থামাবো না।
এমন একজন মানুষের চরিত্র নিয়ে যখন ঘৃণা ছড়ানো হয়, এবং সেটা ছড়ায় এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তখন সেটা আমাদের অস্তিত্বে টান ফেলে।
নবিজী আর আম্মাজান আয়েশার বিয়ে ছিলো অত্যন্ত সুখী এবং সুন্দর একটা বিয়ে। বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও খাদিজার পরে আয়েশাই নবিজীর সবচে কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন। এইটা অস্বাভাবিক কোন বিয়ে ছিলো না। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেও এই বিয়ে নিয়ে কোন কথা হয় নাই। ঐ সময়ের সমাজে বিষয়টা স্বাভাবিকই ছিলো।
একই সাথে, বয়সের এতো ব্যবধানও যে রোমান্টিক সম্পর্কে বাঁধা হতে পারে না, এটার একটা উদাহরনও তো মুহাম্মদ (সঃ) -আয়েশা (রাঃ)-এর সম্পর্ক থেকে আমরা দেখি। দুজন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর ভালোবাসা থাকলে বয়স সেখানে সংখ্যা হয়ে যায়, এইটা বোঝানোও হয়তো এই বিয়ের একটা উদ্দেশ্য ছিলো।
একজন মুসলমান হিসেবে আমরা নবিজীর সবকিছুই Own করি। সবকিছু মানে সবকিছু। তাঁর বিয়ে, তাঁর রাজনীতি, তাঁর কূটনীতি, তাঁর আদর্শ সবকিছুই। আমরা মানি কি মানি না, এইটা কোন প্রশ্ন না, প্রশ্ন হলো, আমরা আমাদের নবিজীর সবকিছুকেই Own করি। নবিজীর কোন একটা ব্যাপারে অ্যাটাক করলে তাই আমরা ট্রিগার্ড হই, পজেসিভ হই, প্রটেক্টিভ হয়ে উঠি।
এখন, অন্যান্য ধর্মের মানুষরা কেন ট্রিগার্ড হয় না, সেইটা তাদের যাইয়া জিগান। আপনার বাপরে গালি দিলে আপনার খারাপ লাগে না, আপনার বৌ রে গালি দিলে আপনার খারাপ লাগে না, সেটা ভাই আপনার ব্যাপার। আমার খারাপ লাগে, তাই আমি কথা বলি।
হয়তো আপনার বাপ, মা বা বৌ আপনার কাছে ঐ আবেগের জায়গাতে নাই, সেটাও আপনার ব্যাপার। আমার আবেগের জায়গা আর আপনার আবেগের জায়গা মেলাতে যান কেন?
যিশুরে নিয়ে বিদ্রুপ করলে খ্রিস্টানরা কেন প্রতিবাদ করে না, সেই প্রশ্ন আমাদের করে লাভ কী? যিশুরে খ্রিস্টানরা কেমনে ট্রিট করবে, সেইটা তাদের ব্যাপার। আমরা আমাদের Beloved Prophet (sm.) আমাদের নিজেদের ওয়েতেই ট্রিট করবো।
নবিজীকে নিয়ে কটুক্তির পর সারা পৃথিবীর এক যোগে প্রতিক্রিয়া দেখানোটা ছিলো অভূতপূর্ব একটা ঘটনা। কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, ইরান সব দেশই পারস্পরিক পলিটিক্যাল ঝামেলা ভুলে একযোগে প্রতিবাদ করেছে, এটা আমাদের স্বস্তি দিয়েছে।
মিডল ইস্ট ইন্ডিয়ার রেমিট্যান্স এর অন্যতম প্রধান সোর্স। পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত, বিক্ষোভ মিছিলের সিদ্ধান্ত, সাথে সাথে কাতারের উচিত এই রেমিট্যান্সের জায়গাতে একটা ধাক্কা দেওয়া। কটুক্তি যিনি করেছেন, তার বিচার না করা হলে, রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা না চাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিবাদ চলুক। যাতে ভবিষ্যতে আর কোন দেশ এমন দুঃসাহস দেখানোর আগে দুইবার ভাবতে বাধ্য হয়।
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। আমাদের ভেতরে মাজহাব থাকবে, দল থাকবে, পাপী থাকবে, গুড মুসলিম বা ব্যাড মুসলিম থাকবে, জাতীয়তাবাদ থাকবে, রাজনীতি থাকবে। কিন্তু নবিজীকে আমাদের এসবের উর্ধ্বে রাখতে হবে। নবিজী আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের পরিচয়। এই পরিচয়ের গায়ে যেন আমরা কখনও আঁচড় না লাগতে দিই।
.
.
-সাদিকুর রহমান খান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন